Sunday, October 30, 2016

ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ দূর করবেন যেভাবে


ত্বকে বিভিন্ন অবাঞ্ছিত দাগ হয়। এগুলো দূর করতে এ দেশেই অনেক ভালো চিকিৎসা রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৪০তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ত্বকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যে দাগ হয়, এর প্রধান কারণগুলো কী?
উত্তর : খুব প্রচলিত আমরা যে জিনিসগুলো দেখি, সেগুলো হলো মেছতা। গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ, বেশি কসমেটিকসের ব্যবহার, বেশি সূর্যের আলো—এসব কারণে মেছতা হতে পারে। এ ছাড়া আরো কারণ অনেকে মোটা হয়ে যাচ্ছে, দেখা যায় ঘাড় কালো হয়ে যাচ্ছে। মুখের আশপাশে কালো হয়ে যাচ্ছে। ওজন বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, এমনকি ক্যানসারের কারণেও এ ধরনের দাগ হতে পারে। এ ছাড়া দেখা যায় যে কিছু কিছু জন্মদাগ আছে, কালো রঙের তিল। সব সময় কালো হবে তা নয়, কখনো কখনো সাদা রঙের তিল, লাল রঙের তিল। অনেকে মনে করে, শ্বেতী কি না। শ্বেতী হলে এটা অনেক জায়গায় ছড়িয়ে যাবে। যেটা নিভাস এনিমিকাস, জন্মদাগ যেটা, সেটা একই জায়গায় থাকবে। বাচ্চাটাও বড় হবে, সেটার আকারও শরীরের তুলনায় বড় হবে। খুব সহজে আমরা এটার রোগনির্ণয় করতে পারি। এ রকম সাদা, লাল, কালো দাগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ত্বকের বিভিন্ন রোগ আছে। কিছু রোগ আছে লাইকেন প্লেনাস। যখন এটি ভালো হয়ে গেল, তখন স্মৃতিচিহ্ন রেখে যায়। এটা সাদাও হতে পারে, কালোও হতে পারে। এসব কারণে কিন্তু সারা গায়ে কালো দাগও হতে পারে।
প্রশ্ন : অনেকের দেখা যায়, চোখের নিচেও কালো দাগ হয়। এটা নিয়ে অনেকে চিন্তিত হয়। শুধুই ঘুমের কারণে কি চোখের নিচে এই কালো দাগ হয়?
উত্তর : শুধু ঘুমের কারণে নয়, তবে ঘুম একটি কারণ। যারা খুব বেশি মানসিক চাপে থাকে, তাদের হতে পারে। এমনকি আমরা চোখের নিচের কালো দাগ দেখে বলি সে এটোপিক কি না। এটোপিক ডার্মাটাইটিস যাদের থাকে, তাদের চোখের নিচে একটি কালো দাগ। একে আমরা সংকেত হিসেবে দেখি। এর চিকিৎসা একটু কঠিন। আমরা যখন ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে আলোচনা করি, তখন বিষয় থাকে চোখের নিচে কালো দাগ নিয়ে কী করি। এটা তো একটি কসমেটিকস সমস্যা। অনেকে এটি নিয়ে চিন্তিত থাকে। তবে এটা খুব সহজ নয়।
আমরা একে কমাতে পারি, না-ও করতে পারি, তবে সে ফিরে ফিরে আসতে চায়।
প্রশ্ন : লিপিড প্রোফাইল বা অন্য কোনো বিষয়ের সঙ্গে কি এর সম্পর্ক আছে?
উত্তর : লিপিড প্রোফাইলের সঙ্গে এর খুব একটা সম্পর্ক নয়। তবে যেটা বলছি যে ওজন যদি বেশি বেড়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে এর একটা প্রভাব থাকতে পারে।
প্রশ্ন : একটি দাগ হলে একে কখন গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে?
উত্তর : যেমন ধরেন আমরা কথা বলছিলাম, জন্মদাগ বা তিল নিয়ে। সবারই মোল আছে, এগুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তিত হতে হবে। একটি মোলের বিপদের লক্ষণগুলো কী কী? যদি দেখি একটি তিল অনেক দিন ধরে আছে, তবে হঠাৎ করে সে বড় হয়ে যাচ্ছে। চুলকাচ্ছে। এখান থেকে একটু পানি বের হচ্ছে, একটু রক্ত বের হচ্ছে। এর আশপাশে ছোট ছোট আরো নতুন নতুন তিল বের হচ্ছে। এগুলো দেখলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
প্রশ্ন : বিশেষ করে মুখে গলায় কিংবা হাতে দাগ হতে দেখা যায়। এতে করণীয় কী?
উত্তর : বিশ্বব্যাপী আসলে সবাই সুন্দর হতে চায়। তাই এসথেটিক ডার্মাটোলজি একটি নতুন ব্রাঞ্চ। কীভাবে সুন্দর হওয়া যায়? অনেক রকম চিকিৎসা আছে। যেমন রোগ অনুযায়ী। যে মোটা হয়ে যাচ্ছে, তার কালো দাগ বেড়ে যাচ্ছে। প্রথম কথা হচ্ছে, সবজি খাওয়া বাড়িয়ে দেন, ভাজাপোড়া কমিয়ে দেন। ব্যায়াম করেন। ওজন কমালে এই দাগ কমে যাবে। যাদের মেছতা আছে, তাদের যেই কারণগুলোর কথা বলছিলাম, সূর্যের আলো থেকে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারব, এক নম্বর। নিয়মিত সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা নিতে হবে। এর আরো ভূমিকা রয়েছে। যারা বেশিদিন চামড়ার ভাঁজকে দূরে রাখতে চায়, তারা এটা ব্যবহার করতে পারে। ভিটামিন এ, ই আছে। এগুলো যারা খায়, তাদের চামড়ার কালো দাগও কম হবে, সুন্দরও থাকবে বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ আছে, এগুলো দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। জন্মদাগ আছে, সেগুলোরও চিকিৎসা করা যায়। যেমন লাল রঙের জন্মদাগ একভাবে চিকিৎসা করি, কালো রঙের জন্মদাগ আরেকভাবে চিকিৎসা করি। বিভিন্ন লেজার দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। রোদের কারণে কালো দাগ হচ্ছে। এখানে কিছু চিকিৎসা আছে, সেগুলো করতে পারি। অনেকখানি সেই দাগকে তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিতে পারি।
প্রশ্ন : শ্বেতী রোগ কি ভালো হয়?
উত্তর : এটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। এটা ভেতর থেকে হয়। আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রে অনেককেই ভালো করতে পারি। তবে আমরা বলে দিতে পারব না, এটা আবার হবে না। অনেকে ভালো থাকে। এর অনেক চিকিৎসা রয়েছে। উপমহাদেশে একটি সোসাইটি আছে, পিগমেন্ট রিসার্চ সোসাইটি। আমরা নিয়মিত বসি, আধুনিক চিকিৎসাগুলো বাংলাদেশেও আছে। এখন অনেক ভালো সার্জিক্যাল চিকিৎসা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেলানিন কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তখন অন্য জায়গা থেকে মেলোনোসাইট নিয়ে সেখান থেকে বসিয়ে দিই।
প্রশ্ন : শ্বেতী রোগ কি ছোঁয়াচে?
উত্তর : কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এটা নিয়ে আসলে অনেক ভুল ধারণা আছে লোকজনের মধ্যে। আরেকটি প্রশ্ন করে অনেকে, এটা কি পরবর্তী প্রজন্মের হবে কি না? খুব কম হবে। ২০ ভাগের মতো হয়তো। কোনোভাবেই এটা ছোঁয়াচে না। দেখতেই খারাপ লাগে। এর আর কোনো ক্ষতিকর বিষয় নেই। তবে যাদের শ্বেতী আছে, তাদের সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা লাগবে।

No comments:

Post a Comment