আমাদের সকলেরই রাতে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। ঘুম ঠিক মতো না হলে আমরা সারাদিন পরিশ্রম করতে পারি না। আর সারাদিনের ক্লান্তি দুর করার জন্য ঘুম খুব ই দরকার। তবে অনেকেই ঘুমের সমস্যার সম্মূখীন হয়। ঠিক মতো ঘুম হয় না। আপনার ও যদি এই সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এ সমস্যা টি দুর করতে পারবেন সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরন করলেই। এক্ষেত্রে আপনার জীবন ধারায় কিছু পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমেই জানা প্রয়োজন ঠিক কি পরিমান ঘুম আপনার দরকার। নিচে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
১। একটি সহজ পরীক্ষা করুন
একটি রাতের পরীক্ষার মাধ্যমেই ফলাফল নির্ধারণ করতে পারেন। তবে সর্বোত্তম ফলাফল পেতে আপনি অনেকগুলো রাত মিলিয়ে পরীক্ষাটি করুন।
– এই পরীক্ষায় আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যেতে হবে। সবচেয়ে ভাল সময় হল এই পরীক্ষাটি করার যখন আপনার কাজ বা স্কুল/কলেজ বন্ধ থাকবে। তখন একটি নির্দিষ্ট সময় আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন এবং সপ্তাহব্যাপী পরীক্ষা কার্যটি চালাতে পারবেন।
– এই কিছুদিন আপনি এলার্ম সেট করবেন না। ঘুম পূর্ণ হওয়ার পর আপনি স্বাভাবিকভাবেই জেগে উঠবেন। তবে চেষ্টা করবেন প্রথম রাতে একটি দীর্ঘ সময় ঘুমানোর। হয়তো ১৬ ঘন্টা বা তার বেশিও হতে পারে। এটা এ কারণেই যে আপনার ঘুম পূর্বে পূর্ণ হয়নি।
– গাড় ঘুমের জন্য রাতে আলো নিভিয়ে ঘুমাবেন। এখন আপনি জানবেন যে, আপনার শরীরের জন্য কত ঘন্টা ঘুম প্রতি রাতে দরকার।
– যদি আপনার পর্যাপ্ত ঘুম অর্জিত হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে ঘুমের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
২। আপনার স্বল্পমেয়াদী ঘুমের অভাব পূরন করুন
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে আপনার শরীরের অনেক চাহিদা পূরণ হতে ব্যর্থ হয়। কাজ, খেলা বা পড়াশুনার জন্য হলেও যতটা সম্ভব দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। আপনি আপনার সকল কাজের জন্য একটি রুটিন করুন। প্রতিটি রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর জন্য একটি ঘন্টা অতিরিক্ত যোগ করুন। এর মানে এই যে, আপনি এখন জানেন আপনার কতটুকু ঘুম দরকার এবং সেই হিসেবে আপনি ঘন্টা হিসাব করে রাখুন।
৩। দীর্ঘমেয়াদী ছুটি নিতে পারেন
দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের চাহিদা পুর্ণ করতে আপনার কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি দীর্ঘমেয়াদী ছুটি নিতে পারেন। আপনি প্রতি রাতে একই সময়ে বিছানায় যাবেন এবং রোজ সকালে ঘুম না হওয়া পর্যন্ত জেগে না ওঠার চেষ্টা করবেন। এরপরেও যদি আপনার ঘুমের সমস্যা হয় তাহলে আপনি কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। ঘুম ঠিক মতো না হলে আপনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন যেমন স্থূলতা, ইনসুলিন রোধ, স্ট্রোক, মেমরি লস এবং হৃদরোগ।
৪। বয়স অনুযায়ী ঘুমের চাহিদা চিহ্নিত করুন
ডাক্তার অথবা বিশেষজ্ঞরা বয়স অনুযায়ী ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী প্রদান করে থাকে। জাতীয় ঘুম ফাউন্ডেশন সহ কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য সাইট বয়সের পার্থক্য অনুযায়ী ঘুম নির্দেশিকা প্রদান করেন। আপনি ইচ্ছে করলে সে চার্ট ফলো করে আপনার জন্য ঠিক কি পরিমান ঘুম দরকার তা নির্ধারণ করতে পারেন।
৫। পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যতা
ঘুমের জন্য যে জায়গাটা আরামদায়ক সেই জায়গাটি আপনার জন্য নির্ধারণ করুন। আরামদায়ক এবং শীতল তাপমাত্রায় আপনার শয়নকক্ষ রাখুন। আপনি কখনই এমন জায়গা নির্ধারণ করবেন না যেখানে অনেক শব্দ যেমন টিভি থাকে বা রাস্তার ধারের কক্ষ। নিশ্চিত করুন যে আপনার গদি এবং বালিশ আরামদায়ক। শিশু ও পোষা প্রাণী একই বিছানায় নিয়ে ঘুমানো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
৬। আপনার খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন
স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্যাভাস স্বাস্থ্যকর ঘুমের উপর অবদান রাখে। আর আপনার শরীরকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন এবং না খেয়ে কখনই ঘুমোতে যাবেন না। এতে আপনার স্বাস্থ্য ও ঘুম এই দুটোর উপরই ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। পরিমান মতো পানি পান করুন। ধূমপান বন্ধ করুন বা শয়নকাল ধূমপান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। নিকোটিন উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া শয়নকালে এলকোহল ও এড়িয়ে চলুন। এলকোহল প্রাথমিক পর্যায়ে নিদ্রালু বোধ করাবে, কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যে এটি ঘুমের সমস্যার সম্মুখীন করবে।
৭। ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন অন্তত ১ ঘন্টা ব্যায়াম করুন সকাল ও সন্ধ্যা মিলিয়ে। কিন্তু রাতে শয়নকালে কখনই ব্যায়াম করবেন না। আপনি ঘুমোতে যাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে যদি আপনার ঘুম না আসে তাহলে শুয়ে না থেকে উঠে পড়ুন। মানসিক চাপ থাকলে কিছুক্ষণ হাঁটুন ঘরের মাঝেই এবং কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকতে পারেন এবং পরবর্তীতে আবার ঘুমের জন্য বিছানায় আসুন। তবে ঘড়ি দেখা এড়িয়ে চলুন। ইতিবাচক কিছু চিন্তা করেন এবং ঘুমাতে হবে এমন চিন্তা মাথায় রাখুন।
এক ধরনের বিশেষ ব্যায়াম রয়েছে যা কিনা আপনার দ্রুত ঘুম আনতে সহায়ক হবে। ব্যায়ামটি হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, যা কিনা আমাদের পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমের জন্য খুবই সহায়ক। ব্যায়ামটির নাম হল ৪-৭-৮। যারা অনিদ্রা সমস্যায় ভোগেন এবং সঠিক সময় মতো ঘুম হয় না তাদের জন্য ব্যায়ামটি খুব দ্রুত কাজ করে। আপনি এই ব্যায়ামটির মাধ্যমে কোনো কোনো সময় এক মিনিটেরও কম সময়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। প্রথমে আপনি ৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে নাক দিয়ে খুব ভালো করে শ্বাস নিন। এরপর আপনি ৭ সেকেন্ড দম ধরে রাখুন এবং এই সময় শ্বাস ছাড়বেন না। তারপর ৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস ধীরে ধীরে ছাড়ুন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্ড্রু ওয়েল ঘুম প্রসঙ্গে বলছেন, সকল মানুষেরই সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য রাতের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম অত্যন্ত জরুরি। পরিমান মতো ঘুম কর্মক্ষেত্রে সফলতা পাওয়ারও অন্যতম একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। আপনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে চাইলে পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া আপনার ঘুমের সমস্যা যদি চলতেই থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন এবং কারন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন করা ঔষধ আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে।
No comments:
Post a Comment